‘ফণী’: আম নিয়ে দুশ্চিন্তায় রাজশাহীর চাষিরা
নিজস্ব প্রতিবেদক : ১৬০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার বেগে রাজশাহীকে তছনছ করতে ধেয়ে আসছে সাইক্লোন ফণী। এ নিয়ে সারা দেশের উৎকন্ঠার মধ্যে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রংপুর জেলা প্রশাসনও জরুরী সভা করেছে। ঘূর্ণিঝড় পূর্বাভাস সংক্রান্ত আর্ন্তজাতিক ওয়েবসাইট ‘উইন্ডি ডটকম’ থেকে পাওয়া স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে শনিবার দুপুর নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টি রাজশাহী দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে।
এদিকে সাইক্লোনের গতিবেগ যদি এমনটা থাকে তবে রাজশাহী অঞ্চলের জমিতে থাকা ফসলগুলো ক্ষতির মুখে পড়বে বলে জানিয়েছে সরকারী কৃষি দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামছুল হক জানান, রাজশাহীর অন্যতম অর্থকরি ফসল আম। এবার রাজশাহী জেলায় ১৭ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমিতে ২লাখ ১৩ হাজার ৪২৬ মেট্রিকটন আম উৎপাদনের লক্ষমাত্র রয়েছে। তাবে তিনি আশঙ্কা করছেন, ফণি ঝড়ের গতিবেগ যদি এমনটা থাকে তবে আম উৎপাদনের এই লক্ষমাত্রা অর্জন করা সম্ভন হবে না তেমনি কৃষকেরাও লোকসানে পড়তে পারে।
তিনি আরো বলেন, রজাশাহী জেলায় ৭০ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে এবার ধান চাষ করা হয়েছে। ফণীর কারণে আগেই কৃষকদের সতর্ক করে জানান হয়েছে যেসকল জমির ধান ৮০ভাগ পেকে গেছে তা কেটে ঘরে তুলে নিতে। এপর্যন্ত ১০ ভাগ জমির ধান কাটা সম্ভব হয়েছে। জমিতে থাকা কাঁচা ধানের তুলনামূলক ক্ষতি না হলেও ফণির কারণে পাকা ধানগুলোর ক্ষতি হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামছুদ্দীন আহমেদ জানান, উড়িষ্যা রাজ্যে ২০০ কিলোমিটার গতিবেগে ফণি আঘাত করলেও বাংলাদেশে আসবে ৮০-১০০ কিলোমিটার গতিবেগ নিয়ে। আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক আরও জানান, বাংলাদেশে ফনি আছড়ে পড়ার পর এর প্রভাব থাকবে দুদিন। এর প্রভাবে দিনভর বৃষ্টি থাকবে।
এদিকে আমের ভরা মৌসুম হওয়ায় রাজশাহী ও পার্শ্ববর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম চাষি ও সংশ্লিষ্টদের মাঝে আতঙ্কে ছড়িয়ে পড়েছে। আমের এই মৌসুমে রাজশাহী তথা উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতিতে গতি আসে। আর এমন সময় ফেণি ছোবল দিতে চলেছে অর্থনৈতিক ভাবে মন্দা এই উত্তরাঞ্চলের ওপর।
চারঘাট উপজেলার আমচাষি রহমত আলী জানান, তিনি ফণির বর্তমান গতিপথ নিয়ে আতঙ্কিত। এমনিতেই গত কয়েক বছর ঝল, শিলাবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি ও ফরমালিন আতঙ্কে আমের দাম নাই। তার উপর ফণির আক্রমন হলে তাকে পথে বসতে হবে।
তিনি আরো জানান, এবার শিলাবৃষ্টির পরিমাণ বেশি হওয়ায় বাগানগুলোর আমের বোঁটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এর মাঝে যদি ১০০ বা দেড়শো কি.মি. বেগে ঝড় হয় তবে বাগানগুলোতে আম খুঁজে পাওয়া যাবে না।
পুঠিয়া উপজেলার আম ব্যবসায়ী সামসুল হক জানান, এখন আমের ভরা মৌসুম হওয়ায় জেলার অর্থণীতি একেবারেই মুখ থুবড়ে পড়বে। সবাই চেয়ে রয়েছে আমের দিকে। আম পাকার সাথে সাথে এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে গতি আসবে। কর্মসংস্থান হবে অনেকের। তবে এরই মাঝে প্রকৃতির এমন বিপর্যয় আম চাষিসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। সবাই আল্লাহে স্বরণ করছে। ফণির ঝড়ের গতিবেগ যেন কমে আসে।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দিন বলেন, আম বিরূপ আহবাওয়াতেও টিকে থাকার ফল। তবে আমরা ফণি গতিবেগ নিয়ে যে তথ্য পাচ্ছি তাতে করে এই ঝড়ে বাগানের আম ঝরে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। তবে বাগানের সব আম ঘরে পড়বে না। তিনি আরো জানান, আম ঝরে পড়লে কাঙ্খিত লক্ষমাত্রা অর্জন না হওয়ার কারণে কৃষকদের ক্ষতি হতে পারে।