বাঘায় গুজবে তিন বাড়ি লকডাউন করলেন ইউপি চেয়ারম্যান

প্রকাশিত: এপ্রিল ২, ২০২০; সময়: ৮:৫৯ অপরাহ্ণ |
বাঘায় গুজবে তিন বাড়ি লকডাউন করলেন ইউপি চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঘা : ছুটির কারণে গত ১৮ মার্চ বাড়ি আসান বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের দিঘা গ্রামের শহিদুল ইসলামের ডুয়েট পড়ুয়া ছেলে সজিব। গত মঙ্গলবার তার জ্বর-জ্বর মনে হচ্ছিল। এ জন্য পাশের সজিব দিঘা বাজারে ওষুধ কিনতে যায়। এর পর এলাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে সজিব করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর এই গুজবে তার বাড়িসহ তিনটি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করে এলাকায় মাইকিং করে দেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান। অপর দুই বাড়ি শহিদুলের জামাই এবং ভায়রার।

শহিদুল ইসলাম বলেন, গত মঙ্গলবার মসজিদের মাইক থেকে স্থানীয় চৌকিদার ঘোষণা দেয় শহিদুলের ছেলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তারা বাড়ির বাইরে না আসতে পারে এবং তার বাড়িতে যেন কেউ না যায় এ জন্য শহিদুলের বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান লকডাউনের আদেশ দিয়েছেন। শহিদুলের বাড়ির সঙ্গে তার জামাতা ও ভায়রা বাড়িও লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে বলে মাইকিং করা হয়। এছাড়াও রাতে তার বাড়িতে কে বা কারা ইটপাটকেলও নিক্ষেপ করে। তবে তার বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করা হলেও সরকারিভাবে কোন খাদ্য সামগ্রীর সহায়তা পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।

শহিদুল জানান, তার ছেলে ডুয়েটে পড়াশোনা করে। ছুটির কারণে সে বাড়িতে এসেছে। গত মঙ্গলবার তার একটু জ্বর-জ্বর মনে হয়েছিল। এজন্য দিঘা বাজারে একটি ওষুধের দোকানে ওষুধ আনতে গিয়েছিল। তারা আর কিছুই জানেন না। এরপর তার বাড়িতে ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার, উপজেলার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদকসহ স্থানীয় নেতারা এসে বাড়ির ভেতরে থাকার নির্দেশ দেন। তার জামাইয়ের দিঘা বাজারে একটি ওষুধের দোকান আছে। তাকেও বাড়ির বাইরে না আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার ভায়রার বাড়ি দিঘা পশ্চিমপাড়ায়। তাকেও বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর পর থেকে তারা বাড়িতেই রয়েছেন বলে জানান তিনি।

এদিকে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া ও লকডাউন ঘোষণার খবর শুনে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নির্দেশে বুধবার শহিদুল ইসলামের বাড়িতে যান স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ প্রোভাইডার আসাদুল ইসলাম। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর খবর পেয়ে শহিদুলের বাড়িতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওই বাড়ির কারো মধ্যে করোনা আক্রান্তের কোনো উপসর্গ পাওয়া যায়নি। বিষয়টি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তাদের ছয়/সাতদিন বাড়িতে থাকতে বলেছে বলে জানান তিনি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মজিবুর রহমান বলেন, ওষুধের দোকান থেকে শুনে এসে একজন স্কুল শিক্ষক তাকে বলেছে শহিদুলের ছেলের নাকি জ্বর। তার করোনাও হতে পারে। এর পর ইউপি চেয়ারমান বাজার বন্ধ করে দেয়াসহ শহিদুলের বাড়ির লোকজনকে বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করা করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে তার ভায়রা ও জামাইয়ের বাড়ির লোকজন তাদের বাড়িতে আসার কারণে তাদেরও তিনি বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করেন। এর পর মুঠোফোনে বিষয়টি সিভিল সার্জনকে জানানোর পর চিকিৎসক গিয়ে প্রাথমিক পরীক্ষা করে দেখেছেন এবং ছয়-সাতদিন বাড়ি থেকে বের না হওয়ার জন্য বলেছেন।

বাউসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান বলেন, সতর্কতামূলক শহিদুলের পরিবারের সদস্যদের বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়াও সার্বক্ষনিক তার শহিদুলের খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালেও চৌকিদার পাঠিয়ে খবর নেয়া হয়েছে। এখন জ্বর নেই। এখন বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও চিকিৎসকরা দেখছেন বলে জানান তিনি।

বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীন রেজা বলেন, শহিদুলের ছেলের জ্বর, সর্দি, কাশি হয়েছে বলে স্থানীয় বাউসা ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান তাকে জানিয়েছেন। এই জন্য তাদের কয়েকদিন বাড়ির বাইরে না আসার জন্য বলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সার্বক্ষনিক খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে