রাজশাহীতে জামিন নিয়ে পালিয়েছে সেই ভারতীয় জেলে

প্রকাশিত: মার্চ ২৯, ২০২০; সময়: ৯:১০ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে জামিন নিয়ে পালিয়েছে সেই ভারতীয় জেলে

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর আদালত থেকে জামিন নিয়ে পালিয়েছে ভারতীয় জেলে। প্রনব মন্ডল নামের এ ভারতীয় জামিনের শর্ত লঙ্ঘন করে রাতের আধারে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়েছে বলে জানা গেছে। জামিনের শর্ত অনুযায়ী, জামিনদার অথবা আত্মীয়ের বাড়িতে অবস্থানের কথা থাকলেও জামিনের পরদিন রাতেই ভারতে চলে গেছেন প্রনব। প্রনব বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের দায়ে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে প্রনব গত ২৩ মার্চ দুইটি মামলায় জামিনের পর রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ছাড়া পান। ২৪ মার্চ রাতে চারঘাটের ইউসুফপুর সীমান্ত দিয়ে তিনি ভারতে পালিয়ে যান। ২৫ মার্চ ভোরে ভারতের কাকমারী বিএসএফ ফাঁড়ির জওয়ানরা গাড়িতে করে পশ্চিমবঙ্গের জলঙ্গি থানার শিবচর গ্রামে প্রণবকে পৌঁছে দিয়েছে।

জানা যায়, রাজশাহীর চারঘাট সীমান্তে গত বছরের ১৭ অক্টোবর বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনার সময় অনুপ্রবেশকালে আটক হয় ভারতীয় নাগরিক প্রণব মন্ডল। ওইদিনের ঘটনায় এক বিএসএফ সদস্য নিহত হয়েছিলেন। তখন থেকে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। তবে ২৩ মার্চ দুই মামলায় জামিনের পর রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি ছাড়া পান। ২৪ মার্চ রাতে ইউসুফপুর সীমান্ত দিয়ে তিনি ভারতে পালিয়ে যান।

তবে প্রণবের জামিন ও পালিয়ে যাওয়া সম্পর্কে রাজশাহীর ১ নম্বর বিজিবি ব্যাটালিয়ন কর্তৃপক্ষ কিছুই জানেন না। রাজশাহীর বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ জানান, প্রণবের জামিন, কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়া ও কাউকে না জানিয়ে ভারতে চলে যাওয়া সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। মামলা থাকায় প্রণবের বাংলাদেশেই থাকার কথা।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে, চারঘাট সীমান্তের বালুঘাট এলাকার পদ্মার জলসীমায় ভারতীয় একদল জেলে অনুপ্রবেশ করে এবং কারেন্টজাল দিয়ে ইলিশ ধরে। এ ঘটনা দেখতে পেয়ে চারঘাট ফাঁড়ির বিজিবি সদস্যরা অচিন্ত্য মণ্ডল, বিকাশ মণ্ডল ও প্রণব মণ্ডলকে নৌকা ও জালসহ আটক করে। তবে অচিন্ত্য ও বিকাশকে বিজিবি ছেড়ে দেয়।

বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠকের পর প্রণবকেও ছেড়ে দেওয়া হবে বলে বিজিবি সদস্যরা জানান। কিন্তু মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গি থানার কাকমারী বিএসএফ ফাঁড়ির চার সদস্য অনুমতি ছাড়াই স্পিডবোটে বাংলাদেশে চলে আসে। প্রণবকে জাল ও নৌকাসহ তারা ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এতে বিজিবি বাধা দিলে বিএসএফ সদস্যরা ঘটনাস্থল ত্যাগের সময় গুলিবর্ষণ করে। বিজিবির সদস্যরাও পাল্টা গুলি করে।

এ সময় বিএসএফের হেড কনস্টেবল বিজয় ভান সিংহ নিহত হন। আরও দুই বিএসএফ জওয়ান আহত হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দেয়। বিজিবি ও বিএসএফের ডিজি পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি উঠে আসে। দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে চিঠি চালাচালি হয়।

এদিকে ওই ঘটনার দিন রাতে চারঘাট বিজিবি ফাঁড়ির হাবিলদার হুমায়ুন কবীর বাদী হয়ে প্রণব, অচিন্ত্য, বিকাশ ও অজ্ঞাত বিএসএফ সদস্যসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশ ও কারেন্টজাল দিয়ে মাছ শিকার ও বিজিবির ওপর গুলিবর্ষণের অভিযোগে দুটি মামলা করেন। গত বছরের ১৮ অক্টোবর প্রণবকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ডিসেম্বরে প্রণবসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দুই মামলায় চার্জশিট দেয় পুলিশ।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার গিয়াস উদ্দিন জানান, ১৭ মার্চ প্রণবের জামিনের আবেদন করেন রাজশাহী বারের আইনজীবী ইন্তাজুল হক। ওইদিন একটি মামলায় তাকে জামিন দেওয়া হয়। পরে অন্য মামলায়ও তিনি জামিন পান। চারঘাটের ইউসুফপুর গ্রামের নিতাই মণ্ডল আত্মীয় পরিচয় দিয়ে আদালতে হলফনামা দেন। তবে জামিননামায় স্বাক্ষর করেন চারঘাট উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য আবদুর রহিম। জামিনের শর্তে তাকে বাংলাদেশে আত্মীয় বাড়িতে অবস্থানের কথা বলা হয়।

জানা গেছে, ছাড়া পেয়ে প্রণব নিতাইয়ের বাড়িতেই যান। সেখান থেকে ২৪ মার্চ রাতে ইউসুফপুর সীমান্ত দিয়ে তিনি ভারতে পালিয়ে যান। তবে প্রণবের জামিনদার আবদুর রহিম বলেন, তিনি প্রণবকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না। নিতাই তাকে অনুরোধ করায় তিনি জামিননামায় স্বাক্ষর করেছেন। প্রণব ফিরবে কিনা সে ব্যাপারে তিনি জানেন না।

রাজশাহী পুলিশ সুপার মো. শহীদুল্লাহ জানান, বিষয়টি আদালতে জানানো হবে। জামিননামায় স্বাক্ষরকারী ও আত্মীয় পরিচয় দেওয়া ব্যক্তির বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে