বাগমারায় তিন ফসলী জমিতে বিদ্যুৎ গ্রিড উপকেন্দ্র স্থাপনের প্রতিবাদে মানববন্ধন

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২০; সময়: ১২:৪০ পূর্বাহ্ণ |
বাগমারায় তিন ফসলী জমিতে বিদ্যুৎ গ্রিড উপকেন্দ্র স্থাপনের প্রতিবাদে মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগমারা : রাজশাহীর বাগমারায় আশেপাশে পরিত্যক্ত বা অকৃষি জমি থাকলেও বিশেষ একটি চক্রের ইন্ধনে আবাদী তিন ফসলের জমিতে পরিকল্পিত বিদ্যুৎ গ্রিড উপকেন্দ্রের নামে জমি দখল নিতে পায়তারা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জমির মালিকরা আবাদী তিন ফসলের জমিতে পরিকল্পিত বিদ্যুৎ গ্রিড উপকেন্দ্র স্থাপনের নামে অধিগ্রহণের ঘোর বিরোধীতা জানিয়ে মানব বন্ধন করেছেন।

জানা গেছে, উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নের গোয়ালপাড়ার মৌজার বিলে তিন ফসলি জমিতে নাটোর পল্লী বিদ্যুতের নামে পরিকল্পিত বিদ্যুৎ গ্রিড উপকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অবৈধ ভাবে জমির মালিকদের ব্যতি রেখে একটি মহল উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জ থেকে প্রায় ৪ কিঃ মিটার দুরত্বে বিলের মধ্যে ফসলি জমি বিদ্যুৎ গ্রিড নির্মাণে অধিগ্রহণে জমি মালিকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। স্থানীয়দের দাবি আশেপাশে অনেক জমি খাশ বা অকৃষি জমি রয়েছে সেটা বাদ রেখে কৃষকদের তিন ফসলি জমিতে পল্লী বিদ্যুতের গ্রিড উপকেন্দ্র তৈরিতে অধিগ্রহণ করা হচ্ছে।

তারা দাবি করে বলেন, বিলের ধারের অধিকাংশ লোক কৃষির উপর নির্ভরশীল। কৃষিতে তাদের ভরনপোষন দেয়। বিগত দিনে বিলের মধ্যে অবৈধ পুকুর খননে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে যতটুকু ভালো আবাদী জমি রয়েছে তাতে তারা ধান কেটে রবি মওসুমের ফসল আলুচাষ, পেঁয়াজ, গমচাষ করে। রবি মওসুমের পর পুনরায় বোর ধানচাষ করে। এছাড়া ওই জমিতে মাঝ খানে সবজিচাষে অতিরিক্ত আয় পায় তারা। কৃষকরা একই জমিতে ৩/৪ ধরনের ফসল করে জীবিকা নির্বাহ করে চলে। এতে করে ওই ফসলি জমি অধিগ্রহণ হলে তাদের অর্ধহারে অনাহারে জীবনযাপন করতে হবে বলে তার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি ফসলি জমি বাদ রেখে ওই এলাকায় যাত্রাগাছি, উত্তর একডালাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে খাশ কিংবা পরিতাক্ত জমি আছে সেখানে পরিকল্পিত বিদ্যুৎ গ্রিড উপকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।

পিদ্দপাড়া গ্রামের মুকবুল হোসেন, আশেক আলী, রমজান আলী জানান, এই জমি তাদের একমাত্র সম্বল তাদের মুল্যবান ফসলি জমিতে ১৩২/৩৩ কেভি বিদ্যুৎ গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণে গত ৮ এপ্রিল অধিগ্রহণের নোটিশ পেয়ে তারা হতভম্ব হয়ে পড়েছেন। সুর্যপাড়া গ্রামের জোনাব আলী দেওয়ান জানান, রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তর সূত্রে তারা জানতে পারেন গোয়ালপাড়া মৌজায় ঢাকার পাওয়ার গ্রিড নামে একটি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুতের গ্রিড উপকেন্দ্র প্রকল্প স্থাপনে বাস্তবায়ন করছে। জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে ওই এলাকায় প্রায় ১৫ বিঘা জমি নির্বাচিত করেছে। এ প্রেক্ষিতে তার নোটিশও জারি করেছে। এতে আমার ১ বিঘা জমি ওই অধিগ্রহণের আওতায় পড়েছে।

তিনি বলেন, আবাদি জমি ছাড়া এলাকায় অনেক খাশ ও অকৃষি জমি রয়েছে। একটি কুচক্রী মহলের প্ররোচনায় মুল্যবান ফসলী জমি নষ্ট করার চেষ্টা চলছে। বিষয়টি জানার পর তিনিসহ এলাকার শতাধিক কৃষক এলাকাবাসীর পক্ষে ফসলী জমিতে এধরনের কাজ বিরতের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কৃষকের স্বাক্ষরিত আবেদন জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করেন। এর পর আরো দু’ দফা জমি অধিগ্রহণের নোটিশে তারা বিব্রত ও ভীতগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। পরে পরিকল্পিত প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে ফসলি জমি রক্ষা করতে ওই সকল জমির মালিকদের পক্ষে কাজ বন্ধের জন্য রাজশাহীতে বাগমারা সহকারী জজ আদালতে কোর্টে আবেদন করা হয়। যার মামলা নং৬৪/১৮ অঃ গ্রঃ।

গত বৃহস্পতিবার জমিতে নেমে মানববন্ধনকারীদের মধ্যে বিলের ধারের পিদ্দপাড়া গ্রামের মৃত ফারুক হোসেনের স্ত্রী মরিয়ম বেওয়া বলেন, যে জমিতে অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, সেখানে তার ৮ কাটার মত জমি রয়েছে। ওই জমি তার একমাত্র আয় রোজগারের উৎস। তা হারালে তাকে পথে বসতে হবে বলে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। একই ভাবে আব্দুল জলিল, জোনাব আলী, মেম্বর মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, তাদের জমি অধিগ্রহণ করা হলে তারা কঠিন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তারা আরো জানান, সরকার অধিগ্রহণে টাকা দিলেও তা দিয়ে হয়ত জমি কেনা সম্ভব হবে না। তাই তারা জমি অধিগ্রহণে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে