বাগমারায় অবৈধ ইট ভাটায় পুড়ছে কাঠ

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২০; সময়: ৯:৪৫ অপরাহ্ণ |
বাগমারায় অবৈধ ইট ভাটায় পুড়ছে কাঠ

ইউসুফ আলী সরকার, বাগমারা : দীর্ঘদিন ধরে চারপাশের পরিবেশ দূষণের মাধ্যমে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা জুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে একের পর এক ইটভাটা। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে হাজার হাজার কৃষি জমি নষ্ট করে চলছে তাদের এ কার্যক্রম। ইট উৎপাদনে ইতিমধ্যে সকল প্রকার কার্যক্রম শেষ করেছেন ইট ব্যবসায়ীরা। অবাদেই ইটভাটা গুলোতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।

শ্রমিকেরা জানান, এসব ভাটায় কয়লা ব্যবহারের সুযোগ নেই। তাই সারা বছর কাঠই পোড়াতে হয়। ভাটা গুলোর পাশে রয়েছে ফলের বাগান, আলু, ধানক্ষেত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও ১০০ থেকে ১৫০ গজের মধ্যে রয়েছে জনবসতি। কাঠ পোড়ানোর ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে লোকালয়ে। তবে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী, আবাসিক এলাকা ও কৃষিজমির এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। অথচ এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। উল্টো এসব ইটভাটা থেকে আদায় করা হচ্ছে কোটি টাকা মাসোহারা। ফলে বিরুপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশের উপর।

এদিকে, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আছে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি ইটভাটার। বাকিগুলো চলছে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে। তবে এসব ইটভাটা মালিকরা সরকারকে রাজস্ব দিচ্ছেন নিয়ম মতোই। পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, আইন না মেনে গড়ে ওঠা ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ অনুযায়ী আবাসিক এলাকা ও কৃষি জমিতে ইটভাটা করা যাবে না।

কিন্তু এ আইনের কোনো তোয়াক্কা না করেই বাগমারা অঞ্চলে গড়ে উঠেছে ৫৯টি ইটভাটা। এর মধ্যে ৩২টি হাওয়া ভাটা, ১১টি ফিক্সড চিমনী ও ১৬টি ড্রাম চিমনী। অধিকাংশ ইটভাটায় আবার জনবসতির খুব কাছাকাছি। ফলে এসব ইটভাটার কারণে মানুষের স্বাস্থ্যগত সমস্যা যেমন হচ্ছে, তেমনি পরিবেশের ওপরও বিরুপ প্রভাব পড়ছে। এছাড়া একের পর এক ইটভাটা নির্মাণের কারণে কৃষি জমির পরিমাণও কমছে দিন দিন।

ভাটা মালিকদের বক্তব্য, তারা বৈধভাবেই ব্যবসা করতে চান। কিন্তু আইনী জটিলতার কারণে ছাড়পত্র ও লাইসেন্স পাচ্ছেন না। তাই চাঁদা দিয়ে চালাতে হচ্ছে এসব ইটভাটা। বৈধতা না থাকলেও প্রতি ১০ লাখ ইটের বিপরীতে সাড়ে চার লাখ টাকা রাজস্বও দিতে হচ্ছে সরকারকে।

ভাটা মালিকেরা বলছে, আইন অনুযায়ী কৃষি জমি, আবাসিক ও বন বা বাগান এলাকায় ১ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা করা যাবে না। একই সাথে ইট পরিবহনের জন্য সরকারী পাকা সড়কও ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু এই আইন মানা আমাদের জন্য কঠিন। তাই আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না পেলেও ভাটা স্থাপন করেছি।

তারা জানান, ভাটাগুলোর বৈধকাগজ না থাকার কারণে প্রশাসনের উৎপাতও বেশি। প্রশাসন ঝামেলা করছে। তাদের অনেককে টাকা দিয়ে মেনেজ করতে হচ্ছে।

উল্লেখযোগ্য ভাটা গুলোর মধ্যে, শিবজাইট দিঘীর পাড়ের মোহন, মির্জাপুরের আব্দুস সোহানের, তাহেরপুর জলি’র জামাল উদ্দীন ও ভিআইপি, আব্দুস সালাম, কামারখালীর হাবিবুর রহমান, কাতিলার জাহাঙ্গীর আলম, যোগীপাড়ার জাহাঙ্গীর আলম বাদশা, শ্রীবতিপাড়ার সিদ্দিকুর রহমার, সেউজবাড়ীর ছমির উদ্দীন ও রামরামার জলপাইতলা আজাদ রহমান। ভাটা গুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এলাকাবাসী জোর দাবী জানিয়েছেন।

বাগমারা উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম হেলাল বলেন, পরিবেশ বান্ধব ইট তৈরির জন্য সরকার ইট প্রস্তুতকারীদের সহায়তায় এগিয়ে না এলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। কিছু আইননী সংশোধনের পাশাপাশি পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতিতে ইট তৈরির ব্যবস্থা করার জন্য সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের কারনেই ইটভাটার মালিকেরা অবৈধ ভাটা স্থাপনের সাহস পাচ্ছে।

তারা ইটভাটা মালিকদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করার জন্য ইট প্রস্তুতকারীরা সেখান থেকে সরে আসে এবং অবৈধ ইটভাটা স্থাপন করে ব্যবসা চালিয়ে যায় বলে তিনি অভিযোগ করেন। এলাকার কিছু কিছু ব্যবসায়ী ড্রাম চিমনী ব্যবহারের মাধ্যমে অনুমোদন না নিয়েই ইটভাটা তৈরি করছেন। তিনি সরকারের উন্নয়ন খাতকে তরান্বিত করতে ইট তৈরীতে বিকল্প সহজী করন, আধা কিলোমিটারের মধ্যে পরিবেশের ছাড়পত্র প্রদান, জলাবদ্ধতা দুরীকরন ও ছাড়পত্র, লাইসেন্স পক্রিয়া সহজী করনের দাবী জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফ আহম্মেদ জানান, অবৈধ ইটভাটা ও কাঠ পোড়ানো বিষয়ে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। জেলা প্রশাসক থেকেই এসব বিষয়ে তদন্ত চলছে। অবৈধ ইটভাটা গুলো অল্প সময়ের মধ্যে বন্ধ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

  • 31
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে