রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ম ভেঙে ১৩ পদে নিয়োগ

প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২৩; সময়: ২:০৫ অপরাহ্ণ |
রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ম ভেঙে ১৩ পদে নিয়োগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ থেকে বিরত থাকতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে বারবার নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা মানছে না রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (রামেবি) কর্তৃপক্ষ। নির্দেশনা অমান্য করে একটি সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে অযোগ্য ব্যক্তিদের বসানো হয়েছে। এ

কজনকে অনধিক ছয় মাসের জন্য নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এমনকি রেজিস্ট্রার, পরিচালক, উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার ১৩টি পদের একেকজনকে তিন-ছয়বার পর্যন্ত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় আইনের বাইরে গিয়ে প্রত্যেককে দুই-তিন গুণ করে বেতন-ভাতা দেওয়া হচ্ছে।

নিয়োগ দেওয়া ১৩টি পদই নিয়ন্ত্রণ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সিন্ডিকেট, যাঁদের ১১ জনই হলেন একই ব্যাচের শিক্ষার্থী। তাঁদের নিয়োগের ক্ষেত্রে যে ধরনের অভিজ্ঞতা থাকার কথা তা-ও পূরণ করা হয়নি। আবার এই সিন্ডিকেটটিই পুরো রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্য থেকে শুরু করে দরপত্র, কেনাকাটা ও স্বজনপ্রীতির সঙ্গে জড়িত বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে।

রামেবি সূত্র মতে, ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরের বছর রেজিস্ট্রার হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় অধ্যাপক ডা. আনোয়ারুল কাদেরকে। এরপর টানা দুই বছর তিনি ওই পদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২০ সালে তাঁকে বাদ দেওয়া হলেও ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর আবারও তাঁকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। এই পদমর্যাদার কর্মকর্তার বেতন হওয়ার কথা ছিল ৫৬ হাজার টাকা। কিন্তু তাঁকে বেতন দেওয়া হচ্ছে এক লাখ দুই হাজার ৬৪৩ টাকা।

অভিযোগ রয়েছে, রেজিস্ট্রার আনোয়ারুল কাদেরের মাধ্যমে রামেবিতে গড়ে উঠেছে বিশাল সিন্ডিকেট। তাঁর মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে একই ব্যাচের আরো ১২ জনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ১২টি পদে বসানো হয়েছে। তাঁদের প্রত্যেককে তিন-ছয়বার পর্যন্ত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁদের যে ধরনের অভিজ্ঞতার থাকার কথা, সেগুলো পূরণ করা হয়নি।

১২ জনের মধ্যে রামেবির উপরেজিস্ট্রার ডা. আমিন আহমেদকে চারবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁর বেতন ধরা হয়েছে ৫৫ হাজার ৫২৪ টাকা। অথচ তাঁর বেতন পাওয়ার কথা ছিল ২৯ হাজার টাকার মতো। পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) ডা. জাকির হোসেনকে ছয়বার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁর বেতন দেওয়া হয় এক লাখ ১৯ হাজার ৫৪৬ টাকা। অথচ তাঁর বেতন হওয়ার কথা ছিল ৫৬ হাজার টাকা। উপপরিচালক আখতার হোসেনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে চারবার। তাঁর বেতন হওয়ার কথা ছিল ৩৯ হাজার টাকা, কিন্তু পাচ্ছেন ৭৪ হাজার ৭১৬ টাকা।

রামেবির জমি অধিগ্রহণ না হতেই পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর খুলে পরিচালক পদে বসানো হয়েছে সিরাজুম মনির নামে এক প্রকৌশলীকে। তাঁকে একইভাবে চারবার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই কর্মকর্তার বেতন হওয়ার কথা ছিল ৫৬ হাজার টাকা। কিন্তু তাঁকে দেওয়া হচ্ছে এক লাখ ১৯ হাজার টাকা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিবির নেতা এস এম ওবাইদুলকে দুবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের উপপরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর বেতন হওয়ার কথা ছিল ৩৯ হাজার টাকা, কিন্তু দেওয়া হচ্ছে ৮৪ হাজার টাকা।

এ ছাড়া সহকারী পরিচালক হিসেবে আবুল আশরাফকে তিনবার, পরীক্ষা নিয়ণন্ত্রক আনোয়ার হাবিবকে চারবার, উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সারওয়ার জাহানকে চারবার, সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আমীর হোসেনকে তিনবার, কলেজ পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেনকে তিনবার এবং মেহের ওয়ারকে চারবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ জেড এম মোস্তাককে বারবার ফোন করা হলেও কল ধরেননি তিনি।

জানতে চাইলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত রামেবির রেজিস্ট্রার ডা. আনোয়ারুল কাদের বলেন, ‘এসব সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের অনুমোদন রয়েছে। আমরা এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। এ ছাড়া চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তরা কোনো দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।’ সূত্র- কালেরকণ্ঠ

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে