পাওনাদারের গোপনাঙ্গে লাথি মারেন পাপিয়া

প্রকাশিত: মার্চ ৫, ২০২০; সময়: ৬:৩৭ অপরাহ্ণ |
পাওনাদারের গোপনাঙ্গে লাথি মারেন পাপিয়া

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউয়ের নির্যাতনের শিকার বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী মুখ খুলতে শুরু করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া যাদের নাম প্রকাশ করেছেন সেগুলো তালিকা করে ব্যাপক অনুসন্ধান চালাচ্ছে তদন্ত সংস্থাগুলো। দেখা হচ্ছে, পাপিয়া কাউকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছেন কি না তাও। ২০১২ সালের অক্টোবরে নরসিংদী শহরের বাসাইল এলাকায় নিজ বাসার সামনে তার স্বামী সুমন চৌধুরীর ওপর সন্ত্রাসীরা হামলা চালালে পাপিয়া এগিয়ে যান এবং গুলিবিদ্ধ হন। তারপর থেকে দুজনই বদলে যান। পাপিয়ার কোনো কাজেই বাধা দিতেন না সুমন। জেলার একজন রাজনৈতিক নেতা হয়ে রাজধানী ঢাকায় পাপিয়া কীভাবে বিলাসী জীবনযাপন করতেন সে রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। তার স্বজনদের কী অবস্থা তারও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তার সঙ্গে কার কার সখ্য ও কারা কারা তার ‘পার্টিতে’ যেতেন তাও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। অনেক ভুক্তভোগী মুখ খুলতে শুরু করেছেন। তারা যোগযোগ করছেন। আবার কেউ কেউ মামলা করারও উদ্যোগ নিচ্ছেন।

পাপিয়ার নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী স্বপন মিয়া জানান, ২০১৮ সালের জুন মাসে পাপিয়া ও সুমনের সঙ্গে তার পরিচয়। ব্যবসার কথা বলে তার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নেন তারা। স্বপন মিয়া বলেন, ‘ওই টাকা দাবি করলে গত বছরের ডিসেম্বরে আমাকে গুলশান নিয়ে যায়। পরে একটি রুমে একটি মেয়েকে দিয়ে খারাপ আচরণ করায়। পরে ভিডিও করে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা চালায়। গ্রেপ্তারের কিছুদিন আগে পাপিয়া ও সুমন আমাকে জানায়, আপনার সঙ্গে খারাপ আচরণ করা ঠিক হয়নি। আমরা নরসিংদী আসছি। আপনি আসেন। পরে তাদের বাসায় গেলে আবারও নির্যাতন শুরু করে। একটি রুমে দুদিন আটকে রাখে। টাকার কথা বললে অণ্ডকোষে লাথি মারেন পাপিয়া। রাতে সুযোগ পেয়ে তার আস্তানা থেকে পালিয়ে আসি। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সংস্থাকে বলেছি। তারা মামলা করতে বলেছে। নির্যাতনের কথা মনে পড়লে ঘুম আসে না।’

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আইয়ুব আলীর বয়স প্রায় ৭০ বছর; গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর পলাশ উপজেলায়। নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার মাধ্যমে আলোচিত যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়ার সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। ব্যবসায় পার্টনারশিপের কথা বলে তার কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা নেন পাপিয়া। কিন্তু তাকে পার্টনারশিপ দেওয়ার পরিবর্তে টাকা নেওয়ার কথাই অস্বীকার করেন তিনি। একপর্যায়ে তাকে কৌশলে আটকে রাখেন ‘টর্চার সেলে’। পাপিয়ার নির্দেশে সেখানে তার লোকজন তাকে নির্যাতন চালাত। পরে তিনি অন্ধ সেজে পালিয়ে আসেন। সে নির্যাতনের কথা ভুলতে পারেননি আইয়ুব আলী, মনে পড়লে আজও আঁতকে ওঠেন।

স্বপন মিয়া ও আইয়ুব আলীর মতোই অনেক ভুক্তভোগী পাপিয়ার টর্চার সেলে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন; যারা পাপিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ দিচ্ছেন। তাদের সেব অভিযোগ আমলে নিয়ে চলছে তদন্ত।

সংশ্লিষ্টরা জানান, যুবলীগ মহিলা লীগ নেত্রী পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরী ‘যৌ.নসেবার নামে ব্ল্যাকমেইলের’ মাধ্যমে কখনো ফ্ল্যাট, কখনোবা মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করতেন ব্যবসায়ী বা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে। এভাবে বিভিন্নজনের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের ফায়দা লুটেছেন তারা। তাদের প্রতারণার

র‌্যাবের এক কর্মকর্তা জানান, অভিজাত হোটেলে তরুণীদের দিয়ে অনৈতিক দেহ ব্যবসার কাজে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কিছু পাহাড়ি তরুণীদেরও ব্যবহার করতেন পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন। বিভিন্ন প্রলোভনে তাদের ঢাকায় এনে এ অসামাজিক কাজে জড়ান তারা। তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া স্বীকার করেছেন, নারী ব্যবসার আড়ালে মুদ্রা পাচার ছিল তার অন্যতম বাণিজ্য। বেশ কয়েকটি দেশের অ্যাকাউন্টে তার অর্থ রয়েছে। তবে তার দেওয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

অর্থ পাচার ও অবৈধ সম্পদ নিয়ে পাপিয়ার দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর যদি তার সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়, তবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিআইডির ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি সাংবাদিকদের জানান, পাপিয়ার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য জানতে ইতিমধ্যেই দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্য পুরো তথ্য হাতে পাওয়া যাবে। সেসব তথ্য হাতে পাওয়ার পর মানি লন্ডারিংয়ে যদি পাপিয়ার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণিত হয় তবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডিবি ও র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, নরসিংদীর একটি সাধারণ পরিবারে বেড়ে ওঠা পাপিয়া মাফিয়া ডনের মতো আচরণ করতেন। দ্রুতই কোটি কোটি টাকা ও বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। অভিজাত হোটেলে সুন্দরী তরুণীদের নিয়ে পার্টির আয়োজন ছাড়াও মাদকবাণিজ্য ও জাল টাকার কারবার করতেন। প্রভাবশালীদের মাধ্যমে নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈধ-অবৈধ গ্যাস সংযোগ এবং লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে চাকরি দিয়ে আসছিলেন তিনি। নিজে নিয়মিত মাদক সেবন করতেন। প্রতারণার ফাঁদ পেতে টাকা আদায়ে অনেককে নির্যাতনও করতেন তিনি।

দেশ ছেড়ে পালানোর সময় গত ২২ ফেব্রুয়ারি নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়াকে ঢাকার বিমানবন্দর এলাকা থেকে তিন সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। গ্রেপ্তার অন্য তিনজন হলেন পাপিয়ার স্বামী ও তার অবৈধ আয়ের হিসাবরক্ষক মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন, পাপিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শেখ তায়্যিবা ও সাব্বির খন্দকার। জাল টাকা উদ্ধার, অস্ত্র ও মাদকের পৃথক তিন মামলায় পাপিয়ার ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। তার স্বামী মফিজুর রহমানেরও ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। এছাড়া মামলার অন্য দুই আসামি পাপিয়ার সহযোগী সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবাকেও রিমান্ডে নেওয়া হয়।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে