রক্তাক্ত একুশে আগস্টের নারকীয় ঘটনা

প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২১; সময়: ৯:০৯ অপরাহ্ণ |
রক্তাক্ত একুশে আগস্টের নারকীয় ঘটনা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : রক্তাক্ত একুশে আগস্টের নারকীয় ঘটনা এখনও দুঃস্বপ্নের মতো তাড়িয়ে বেড়ায় অনেককে। ঘটনার এত বছর পরও অনেকে স্মৃতি থেকে মুছে ফেলতে পারছেন না সেই দুঃসহ সময়গুলো। গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যায় গ্রেনেডের বীভৎস আওয়াজ, নিহতদের লাশ, আহতদের আর্তচিৎকার আর সহকর্মীদের বিলাপে।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউ’র আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতারা।

কিন্তু সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমানের সহধর্মিনী এবং আওয়ামী লীগের সেই সময়ের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমানসহ দলের তৎকালীন ২৪ জন নেতা-কর্মী সেদিন নিহত হন। আহত হন পাঁচ শতাধিক। যাদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন কিংবা কেউ কেউ আর স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাননি।

হীম শীতল মৃত্যুর স্পর্শ থেকে বেঁচে যাওয়া অনেকে বিশ্বাসই করতে পারেননি আসলে তারা জীবিত আছেন কি-না। মৃত্যুর এতো কাছাকাছি গিয়ে আবার ফিরে আসায় হয়তো তারা নতুন জীবন পেয়েছেন- কিন্তু যতদিন তারা বেঁচে থাকবেন ততদিন তাদের বহন করে যেতে হবে সেই দুঃস্বপ্নের মত তাড়িয়ে বেড়ানো স্মৃতিকে, হঠাৎ করে গভীর অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়ার সেই ঘটনাকে।

সাভারের মাহবুবা আকতার। গ্রেনেড হামলার পরদিন পত্রিকায় মৃতদের সঙ্গে যার ছবি ছাপা হয়েছিল। যিনি ছিলেন মৃতদের তালিকায়। ঘটনার পর ৭২ ঘণ্টা অজ্ঞান ছিলেন। মৃত মনে করে তাকে মেডিকেলের মর্গেও নেয়া হয়েছিল।

পরবর্তি সময়ে সেদিনের ঘটনার এভাবে বর্ণনা দিয়েছিলেন মাহবুবা বলেন, নেতাদের সঙ্গে কুশলবিনিময় করছিলাম, বক্তৃতা শুনছিলাম। নেত্রী শেখ হাসিনা জয় বাংলা বলার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেনেডের বিকট আওয়াজ। ঢলে পড়লাম মাটিতে। তারপর আর কিছু মনে নেই..। ২৫ দিন পর কলকাতা টিএনএস হাসপাতালে প্রথম স্মৃতিশক্তি ফিরে পান তিনি। ৩০ দিন পর কলকাতা থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। সেই সময়ে তার চিকিৎসার খরচ সম্পূর্ণভাবে নেত্রী শেখ হাসিনা বহন করছিলেন বলে জানিয়েছিলেন মাহবুবা।

এডভোকেট উম্মে রাজিয়া কাজল শরীরে সাড়ে তিন শ’ স্প্রিন্টার নিয়ে এখনো বেঁচে আছেন। বাম পায়ের পুড়ে যাওয়া অংশে রক্ত সঞ্চালন নেই। শুধু কোমরের এক জায়গায় ৫২টা স্প্রিন্টার, পায়েও আছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। সারাক্ষণ জ্বালা পোড়া করে। ব্যথায় কুকরে কেঁদে ওঠেন। গ্রেনেড হামলার এত বছর পরেও ঢাকার মোহাম্মদপুরবাসী রাজিয়ার চোখের সামনে সেদিনের প্রতিটি মুহূর্ত ভেসে উঠে। স্বপ্নগুলো সব উধাও হয়ে গেছে বলে হয়তো সেদিনের সেই দুঃসহ স্মৃতিটিই বার বার তার চোখের সামনে ঘুরে ফিরে আসে।

দিনটির কথা এভাবেই তিনি স্মরণ করেছিলেন নেত্রীর ভাষণ শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে শুনতে পাই বিকট শব্দ। জীবনে কখনো এ রকম শব্দ শুনিনি। উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলাম, দেখি কিছুতেই বাঁ-পা উঠাতে পারছি না। চারদিকে একের পর এক শব্দ। শুনলাম গুলির আওয়াজ। তারপর কিছু জানি না। সেদিন এটুকু বলেই কেমন নিথর হয়ে যান কাজল। টেলিফোনের ওই প্রান্তে কান্নার আওয়াজ। হয়তো বিলাপও। একটা পরিবর্তিত জীবনের ভার বইতে কত কষ্টইতো হওয়ার কথা। এই নিরবতা হয়তো সে কথাই জানান দিচ্ছিল।

আহত আরো একজন নাসিমা ফেরদৌস কয়েক বছর আগে বলেছিলেন, ঘুমের ঘোরে এখনো ২১ আগস্টের মরণঘাতি গ্রেনেডের শব্দ শোনেন তিনি। তার ভাষায় ভয়ে কেঁপে উঠে বুক, ঘুম ভেঙে যায়। বড় কোন আওয়াজ শুনলেই আঁতকে উঠি। মনে হয় আবার বুঝি সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের পুনরাবৃত্তি ঘটলো।’

নাসিমা ফেরদৌস জীবন্মৃত হয়ে বেঁচে থাকাদের মধ্যে একজন। তার প্রতিটি মুহূর্ত কাটে যন্ত্রণায়। গ্রেনেডের আঘাতে ছিন্নবিচ্ছিন্ন দু’টি পা প্রায় পঙ্গু। সর্বাঙ্গে বিঁধে রয়েছে দেড় হাজারেরও বেশি স্প্রিন্টার। যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে পড়েন। ঘুমের ঘোরে সেই বিভীষিকাময় নারকীয় দুর্ঘটনা এখনও তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। নিজের এই অভিশপ্ত জীবনের দ্রুত পরিণতি কামনা করেছিলেন তিনি।

গ্রেনেড হামলায় আহতরা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যে অপশক্তি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছিল তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করতে ও শেখ হাসিনার জীবন নাশের লক্ষ্যে এই হামলা চালানো হয়েছিল বলে তারা উল্লেখ করেন।

  • 25
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে