সাহস নিয়ে দাঁড়ান, আঁধার কেটে যাবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৩, ২০২০; সময়: ৯:৫২ অপরাহ্ণ |
সাহস নিয়ে দাঁড়ান, আঁধার কেটে যাবে : প্রধানমন্ত্রী

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় দেশবাসীকে সাহস নিয়ে দাঁড়ানোর আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; এই লড়াইয়ে সরকার জনগণের পাশে আছে বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি। মহামারী ঠেকানোর লড়াইয়ে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের উৎসবে রাশ টানার মধ্যে রোববার জাতির উদ্দেশে ভাষণ নিয়ে আসেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।

সবাইকে পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপ তিনি তুলে ধরেন জাতির সামনে। অর্থনীতির সম্ভাব্য ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নানা প্রণোদনার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের কাতারে থাকা চিকিৎসাকর্মীদের ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি তাদের বিশেষ সম্মানী এবং স্বাস্থ্যবীমার ঘোষণাও দেন তিনি।

বৈশ্বিক মহামারী আকার ধারণ করা নভেল করোনাভাইরাস বাংলাদেশে সংক্রমিত হওয়ার পর এনিয়ে টানা তৃতীয়বার জাতির সামনে দিক-নির্দেশনা দিতে হাজির হলেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বজুড়ে লক্ষ প্রাণ হরণকারী ছোঁয়াচে এই রোগের বিস্তার এড়াতে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটিতে রয়েছে দেশ; লকডাউনের মতো এই অবস্থায় দেশ কার্যত অচল হয়ে আছে।

মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতা দিবসের পর বাংলাদেশে বাংলা নববর্ষের উৎসবও করোনাভাইরাস কেড়ে নিলেও প্রথা ভেঙে বৈশাখী আমেজের সেটে রোববার জাতির সামনে আসেন শেখ হাসিনা। তিনি শুরুতেই সবাইকে পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি কী পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দেশ চলছে, তার গুরুত্ব তুলে ধরেন।

এবার পহেলা বৈশাখ ঘরে উদযাপনের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “সবাইকে অনুরোধ করব কাঁচা আম, জাম, পেয়ারা, তরমুজসহ নানা মওসুমী ফল সংগ্রহ করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাড়িতে বসেই নববর্ষের আনন্দ উপভোগ করুন। “আপনারা বিনা কারণে ঘরের বাইরে যাবেন না। অযথা কোথাও ভিড় করবেন না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করুন, পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করুন।

বৈশ্বিক মহামারীতে রূপ নেওয়া নভেল করোনাভাইরাসে ইতোমধ্যে লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, ১৮ লাখের বেশি মানুষ হয়েছে আক্রান্ত। বাংলাদেশেও ৬ শতাধিক আক্রান্তের মধ্যে ৩৯ জন মারা গেছে। এই রোগের কোনো টিকা-ওষুধ এখনও আবিষ্কৃত না হওয়ায় সংক্রমণ এড়ানোই একমাত্র পথ; তাই বিভিন্ন দেশ লকডাউন করে সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। এজন্য পহেলা বৈশাখের সব অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে।

এটা করা হয়েছে বৃহত্তর জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে। কারণ,ইতোমধ্যেই এই ভাইরাস আমাদের দেশেও ভয়াল থাবা বসাতে শুরু করেছে বলেন শেখ হাসিনা। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সবাইকে ঘরে থাকতে হবে; মহামারীর দিনে ঘরবন্দি জীবনে জানালার ফাঁকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে এক কিশোরী। সঙ্কটময় এই পরিস্থিতি সাহসের সঙ্গে মোকাবেলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা ভয় পাবেন না। ভয় মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে। কেউ আতঙ্ক ছড়াবেন না। আমাদের সকলকে সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। সরকার সব সময় আপনার পাশে আছে।

ইতিহাস তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি বীরের জাতি। অতীতে নানা দুর্যোগ-দুর্বিপাকে বাঙালি জাতি সাহসের সঙ্গে সেগুলো মোকাবেলা করেছে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। বিজয়ী জাতি আমরা। আমরা সম্মিলিতভাবে করোনাভাইরাসজনিত মহামারীকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হব। নববর্ষের এই ক্ষণে অতীতের জঞ্জাল-গ্লানি ধুয়ে-মুছে আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাওয়ার আশা প্রকাশ করেন তিনি।

দেশবাসীকে অভয় দিয়ে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের যে গভীর আঁধার আমাদের বিশ্বকে গ্রাস করেছে, সে আঁধার ভেদ করে বেরিয়ে আসতে হবে নতুন দিনের সূর্যালোকে।” ভাষণে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতার চরণ উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, “মেঘ দেখ কেউ করিসনে ভয়/ আড়ালে তার সূর্য হাসে/ হারা শশীর হারা হাসি/ অন্ধকারেই ফিরে আসে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে