করোনায় বাতিল হচ্ছে অর্ডার, মুখ থুবড়ে পড়তে পারে পোশাক খাত

প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২০; সময়: ৩:৫৩ অপরাহ্ণ |
করোনায় বাতিল হচ্ছে অর্ডার, মুখ থুবড়ে পড়তে পারে পোশাক খাত

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : গার্মেন্টস কারখানাকরোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে হুট করে সবচেয়ে বড় আঘাত এসেছে তৈরি পোশাক খাতের ওপর। বিশ্বপরিস্থিতির সঙ্গে অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি মিলিয়ে দু ক্ষেত্রেই করুণ দশা এই খাতে।

চীনে শুরু হওয়া করোনা আমদানি খাতে খানিকটা আঘাত হানলেও মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে রফতানি খাত তথা তৈরি পোশাক খাতে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি ঘণ্টায় বাংলাদেশের প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাকের রফতানি আদেশ বাতিল হচ্ছে। এই খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, পরিস্থিতি যেভাবে অবনতি হচ্ছে, তাতে এই খাত মুখ থুবড়ে পড়ে যেতে পারে।

ইতোমধ্যে প্রায় ৪ কোটি ডলারের রফতানি আদেশ বাতিল হয়েছে বলে জানিয়েছেন পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, বিদেশি ক্রেতাদের কেউ ই-মেইল করে রফতানি আদেশ বাতিল করছেন, কেউ স্থগিত করছেন। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে নতুন রফতানি আদেশ না দেওয়ার কথা জানাচ্ছেন।

তৈরি পোশাক খাতের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র তথ্য বলছে, প্রতি ২৪ ঘণ্টায় গড়ে ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্ডার বাতিল হচ্ছে। মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) রাত ১০টা থেকে বুধবার (১৮ মার্চ) রাত ১০টা পর্যন্ত এই ২৪ ঘণ্টায় ৯৪টি কারখানার ১০৪ মিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাতিল হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) বিকেল সোয়া চারটা পর্যন্ত এটি দাঁড়ায় ১৩৩ মিলিয়ন ডলারে।

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র সভাপতি রুবানা হক বলেন, এক কথায় আমরা মরে যাচ্ছি। প্রতিনিয়ত ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডের কাছ থেকে চলমান ক্রয়াদেশ স্থগিত ও বাতিলের খবর আসছে। তিনি বলেন, এমন সময়ে অর্ডার বাতিল হচ্ছে যখন সামনে ঈদ। এ অবস্থায় তৈরি পোশাক খাত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বলতে পারছি না। তবে সামনে ভয়াবহ বিপর্যয় আসছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে বিকেএমইএ’র প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমার পোল্যান্ডের এক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান দু’দফার রফতানি আদেশ বাতিল করেছে। এর মধ্যে একটি আদেশ ছিল ২ লাখ ২০ হাজার ডলারের। আরেকটি আদেশ ছিল ২ লাখ ডলারের। তিনি জানান, করোনার কারণে এখন প্রতিদিন, প্রতি ঘণ্টায় রফতানি আদেশ বাতিল বা স্থগিতের মেইল পাচ্ছেন গার্মেন্ট মালিকরা। এ অবস্থায় সরকার যদি আমাদের পাশে না দাঁড়ায় তাহলে আমরা মারা পড়বো।

উদ্যোক্তারা বলছেন, আমেরিকা বা ইতালির মতো বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ করতে হবে। আর এমনটি হলে তৈরি পোশাক খাত ঘুরে দাঁড়াতে বেশ বেগ পেতে হবে।

তবে এখন পর্যন্ত করোনার কারণে বাংলাদেশের কোনও কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি। শ্রমিক ও মালিকরা করোনা আতঙ্কের মধ্যেও কারখানাগুলো চালু রেখেছেন। এমন পরিস্থিতিতে পোশাকের চলমান ক্রয়াদেশ স্থগিত ও বাতিল করার তালিকা বড় হচ্ছে। এই তালিকায় বড় বড় ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের রয়েছে। এর মধ্যে সিঅ্যান্ডএ, জারা, পুল অ্যান্ড বেয়ার, বেবি শপ, ব্ল্যাকবেরি, প্রাইমার্ক উল্লেখযোগ্য।

বুধবার নারায়ণগঞ্জের এ ওয়ান পোলার নামে একটি কারখানার ১৫ মিলিয়ন ডলারের রফতানি আদেশ বাতিলের কথা জানায় হল্যান্ডের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান সিঅ্যান্ডএ। ই-মেইল করে প্রতিষ্ঠানটির মালিককে জানানো হয় রফতানি আদেশ বাতিলের বিষয়টি।

জানা গেছে, এসকোয়্যার নিট কম্পোজিটের ২২ লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত করেছে দুটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। বাতিল ও স্থগিতাদেশের মধ্যে পড়েছে অ্যাপেক্স হোল্ডিংসের ৪০ লাখ পিস পোশাক। বিটপি গ্রুপের ৪ লাখ ৬৬ হাজার ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়েছে। এছাড়া আমান গ্রাফিক্স অ্যান্ড ডিজাইনের ১ লাখ ১৩ হাজার ডলার মূল্যের ৩৯ হাজার পিস পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। আমান নিটিংয়ের ১ লাখ ৯৭ হাজার ডলারের ৪৪ হাজার ৭২৬ পিসের ক্রয়াদেশ স্থগিত হয়েছে। স্কাইলাইন গার্মেন্টসের ৮ লাখ ৫০ হাজার ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। রুমানা ফ্যাশনের ৯০ হাজার পিস পোশাকের ক্রয়াদেশ স্থগিত করেছে দুই ক্রেতা।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি ও কানাডায় ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ফ্রান্স ও ইতালিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। দেশগুলোতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া এখন অন্যান্য দোকানপাট ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ। সূত্র-ঢাকা ট্রিবিউন

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে