যথাযোগ্য মর্যাদায় রাবিতে জোহা দিবস পালিত

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২০; সময়: ২:৪৭ অপরাহ্ণ |
যথাযোগ্য মর্যাদায় রাবিতে জোহা দিবস পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাবি : যথাযোগ্য মর্যাদায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শহীদ জোহা দিবস হিসেবে পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করেছে।

ঊনসত্তুরের গণঅভ্যূত্থানকালে এই দিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা প্রক্টরের দায়িত্ব পালনকালে পাকিস্তানী সেনাদের গুলিতে নিহত হন। তিনিই এদেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী।

দিবসটি উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনসহ অন্যান্য ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকালে উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া, কোষাধ্যক্ষ এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান আল-আরিফ ও রেজিস্ট্রার এম এ বারীসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শহীদ ড. জোহার সমাধি ও জোহা স্মৃতিফলকে পুস্পস্তবক অর্পণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।

এরপর রসায়ন বিভাগ ও শহীদ শামসুজ্জোহা হলসহ অন্যান্য আবাসিক হল, বিভাগ, পেশাজীবী সমিতি ও ইউনিয়ন ইত্যাদি প্রভাতফেরিসহ শহীদ জোহার সমাধি ও স্মৃতিফলকে পুস্পস্তবক অর্পণ করে।

পরে শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সিনেট ভবনে জোহা স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ‘বাংলাদেশের উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার’ শীর্ষক বক্তৃতা করেন রাবির সাবেক উপাচার্য এবং যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার প্রফেসর এম সাইদুর রহমান খান।

রসায়ন বিভাগের সভাপতি প্রফেসর মো. বেলায়েত হোসেন হাওলাদারের সভাপতিত্বে এই আয়োজনে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য প্রফেসর এম আব্দুস সোবহান। এছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর আনন্দ কুমার সাহা ও উপ-উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী মো. জাকারিয়াসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

স্মারক বক্তৃতায় প্রফেসর এম সাইদুর রহমান খান বলেন ‘তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ একটি প্রত্যয়, একটি স্বপ্ন, যা সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। তথ্যপ্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার একটি দেশকে দারিদ্রমুক্ত, কর্মসংস্থান ও জাতীয় উন্নয়নের চরম শিখরে পৌঁছে দিতে পারে। বিরাট এক পরিবর্তন ও ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এখন এগিয়ে চলছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘একুশ শতকে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ৬ জানুয়ারি ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো শপথ নেন। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের বছরে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণই ছিল তাঁর প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয়। ১২ ডিসেম্বর ২০০৮ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা করে যে ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এ পরিণত হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আব্দুস সোবহান বলেন, ‘শহীদ ড. জোহা একজন নির্ভীক শিক্ষক ছিলেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে বলিষ্ঠ কণ্ঠে তিনি বলেছিলেন, কোনো ছাত্রের গায়ে গুলি লাগার আগে, যেন আমার গায়ে গুলি লাগে। তার আত্মত্যাগ বিফলে যায়নি। তার আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম আরও বেগবান হয়েছে। তিনি আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। এ সময় তিনি দিবসটিকে ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ ঘোষণার দাবি জানান।

এছাড়াও দিবসটি জাতীয় ভাবে স্বীকৃতির জন্য বেলা সাড়ে ১১টায় জোহা চত্বরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছে, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশন একই দাবিতে সংবাদ সম্মেলন, প্রথম আলো বন্ধুসভার গণস্বাক্ষরসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে ।

শিক্ষক দিবসের কর্মসূচিতে আরও রয়েছে- বাদ জোহর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন খানি ও বিশেষ মোনাজাত। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে দোয়া মাহফিল ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন। এদিন শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

উল্লেখ্য ড. সৈয়দ মুহম্মদ শামসুজ্জোহা ১৯৩৪ সালের ১ মে পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়ায় জন্মহগ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এর কিছুদিনের মধ্যেই তিনি লন্ডনে স্কলারশিপ পান। ১৯৬৪ সালে তিনি লন্ডন থেকে ফিরে এসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে যোগদান করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব পালনকালে ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে