গভীর রাতে খাবার নিয়ে সেই বৃদ্ধার ঝুপড়িতে নওগাঁর ডিসি

প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২০; সময়: ১:৩৩ পূর্বাহ্ণ |
গভীর রাতে খাবার নিয়ে সেই বৃদ্ধার ঝুপড়িতে নওগাঁর ডিসি

নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁ : ৭০ বছরের বৃদ্ধা সাবিয়া বেগম। থাকেন নওগাঁ শহরের বাঙ্গাবাড়িয়া বিহারি কলোনি মহল্লার ছোট যমুনা নদীর গাইড ওয়াল-সংলগ্ন সরকারি জমিতে। সেখানে ঝুপড়ি ঘরে গত কয়েক বছর ধরে বসবাস করছেন তিনি।

স্বামী নুরু মিয়া মারা গেছেন ২৫ বছর আগে। মেয়ের বয়স যখন আট মাস তখন স্বামী মারা যান। বিভিন্ন জনের বাড়িতে কাজ করে জীবন চলত তার। মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর এখন একা থাকেন। বয়স হয়ে যাওয়ায় এখন আর কাজ করতে পারেন না। ভিক্ষা করে দিন চলে তার।

দেশে প্রানঘাতি করোনা ভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে ঘরবন্দি হয়ে পড়েন ৭০ বছরের বৃদ্ধা সাবিয়া বেগম। গত কয়েক দিন ঘরের বাহিরে যেতে না পারায় তিনি অসহায় হয়ে পড়েছেন। এতে তার আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যায় এবং মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন।

ঘরে খাবার না থাকায় শুক্রবার দুপুরে উত্তপ্ত রোদে বিহারি কলোনি মাঠে একটি টিনের ওপর নষ্ট ভাত শুকান সাবিয়া বেগম। মানুষের বাড়ি থেকে পাওয়া পান্তা ভাত শুকিয়ে চাল হলে আবার রান্না করে খাওয়ার জন্য। মানবিক এই বিষয়টি ফেসবুকের মাধ্যমে নজরে আসে নওগাঁ জেলা প্রশাসক হারুন অর-রশীদের।

জনগমাগম এড়াতে শুক্রবার রাত ১১টার দিকে সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুনকে সাথে নিয়ে সেই বৃদ্ধার বাড়ীতে যান জেলা প্রশাসক। এ সময় তিনি সাবিয়ার খোঁজ খবর নেন। এতে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন ওই বৃদ্ধা। পরে সরকারের পক্ষ থেকে চাল, ডাল, তেল, চিড়া ও অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী তার হাতে তুলে দেন।

এছাড়াও ডিগ্রী মোড় থেকে শুরু করে বিহারী কলোনিতে বসবাসরত কেউ স্বামীহারা, কারও স্বামী অসুস্থ, কেউ রিকশা বা ভ্যানচালক ও মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করে জীবন চালাতো কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে কাজ বন্ধ। ফলে মানববেতর জীবনযাপন করছে এসব পরিবার খুঁজে খুঁজে বের করে গভীর রাত পর্যন্ত তাদের হাতে খাদ্য সামগ্রী তুলে দেন জেলা প্রশাসক।

এসময় জেলা প্রশাসক হারুন অর-রশীদ জানান, করোনার কারণে কোন দিনমজুর, কর্মহীন ও অসহায় মানুষের ঘরে ভাত থাকবে না, খাবার পাবে না; এ রকম হবে না। তাই এর আগেও একদিন জনসমাগম এড়াতে অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করতে রাতের আঁধারে তাদের বাড়ি বাড়ি খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি।

তিনি বলেন, শুক্রবার রাতে ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি একজন বৃদ্ধা খাবারের অভাবে রোদে পান্তা ভাত শুকিয়েছেন। বিষয়টি আমাকে মর্মহত করেছে। পরে সিদ্ধান্ত নিলাম রাতে ওই বৃদ্ধার বাড়ীতে যাবো। রাত ১১ দিকে তার বাড়ীতে দিয়ে তার সাথে কথা বলে খোঁজ খবর নিই এবং সরকারের পক্ষ থেকে তার হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেই।

এছাড়া তার সাথে কথা বলে জানতে পারলাম যে, একদিন আগে একজনের কাছ থেকে তিনি ২ কেজি চাল পেয়েছে। এছাড়াও একজনের কাছ থেকে কিছু পান্তা ভাত পেয়েছিল। কিন্তু সেগুলো ফেলে না দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকাতে দেয় এবং পরবর্তী সেটি রান্ন করে খাবেন। বর্তমানে তার ঘরে ৩০দিন চলার মত খাবার রয়েছে। আমরা চাই দেশে কেউ খাবারহীন থাকবে না। সরকারের পক্ষ থেকে যথেষ্ট ত্রান বরাদ্দ আছে এবং আরো বরাদ্দ আসছে বলেও জানান তিনি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে