শিবগঞ্জে আ.লীগের সম্মেলনের স্থান নিয়ে ধোঁয়াশা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২০; সময়: ১১:১০ পূর্বাহ্ণ |

নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ : আর একদিন পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন দীর্ঘ ৬ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সম্মেলনকে ঘিরে তৃণমূলের ত্যাগি নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত।

তবে এরই মধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের স্থানকে কেন্দ্র করে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের কিছু বিদ্রোহী নেতা ও স্থানীয় সাংসদের যোগসাজশে চলছে সম্মেলন বানচালের পাঁয়তারা বলেও শোনা যাচ্ছে।

তৃণমূলের ও দূলর্ভপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তা মিয়া ও শিবগঞ্জ উপজেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান মজনু মাষ্টারসহ অন্যান্য নেতা কর্মীদের থেকে জানা যায়, স্থানীয় সাংসদ নিজেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী হওয়ায় নিজের ইচ্ছামত সম্মেলনের স্থান নির্ধারণ করেছেন, শিবগঞ্জ উপজেলার শুরুতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা সংলগ্ন নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নের রাণীহাটিতে।

এ এলাকায় সন্ত্রাসের ঘাটি এবং জামাত-বিএনপির আখড়া হিসেবেও পরিচিত। স্থানীয় এমপি দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আস্থা রাখতে না পেরে বিএনপি ও জামায়াত অধ্যুষিত রাণীহাটি কে বেছে নিয়েছে সম্মেলেন বানচালের উদ্দেশ্যে এমনটাও শোনা গেছে এলাকায়।

এ বিয়য়ে ডা. শামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল এমপির সাথে যোগযোগ করলে তিনি বলেন, শিবগঞ্জ ষ্টেডিয়ামের সামনের কলেজে পরিক্ষার জন্য সেখানে সম্মেলন আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছেনা। দলের সকলের মতামতের ভিত্তিতেই রাণীহাটিতে সম্মেলন স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও দলকে বিভক্তি করার অভিযোগ অস্বীকার করে স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. সামিল উদ্দীন আহমেদ শিমুল বলেন, শিবগঞ্জ উপজেলার সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে নিয়ে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি পদ প্রত্যাশি ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল এমপি ছাড়াও রয়েছেন, শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব নাজমুল হক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা শাহাদাত হোসেন খুররম ও সাবেক ছাত্রনেতা দূর্লভপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু আহমেদ নাজমুল কবীর মুক্তা, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আতাউর রহমান, শিবগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক ছাত্রনেতা আতিকুল ইসলাম টুটুল খান এবং শিবগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বিনোদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আসাদুল আলম আসাদ। তবে ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল এমপি প্রার্থী হবেন কিনা তা পরিস্কার করেননি।

শিবগঞ্জ উপজেলা ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। সর্বশেষ জাতীয় সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনে ডা. সামিল উদ্দীন আহমেদ শিমুল ও সৈয়দ নজরুল ইসলাম বিজয়ী হয়েছেন। যদিও শিবগঞ্জে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলামের সাথে স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দীন আহমেদ শিমুলের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়ায় দলীয় কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে।

উভয়পক্ষই পাল্টাপাল্টি শো-ডাউনও করে নিজের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছেন। সম্প্রতি মুজিব বর্ষের কাউনডাউনের অনুষ্ঠানে সামনে বসা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে, এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিলেন। এ ছাড়াও সোনামসজিদ স্থলবন্দরে দু’পক্ষই নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে করেছে পৃথক পৃথক কমিটি আর এসব কমিটির মাধ্যমেই বন্দরে চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে।

ছত্রাজিতপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানী ছবি বলেন, ২০১৪ সালের ৭ নভেম্বর সর্বশেষ শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাবেক এমপি গোলাম রাব্বানী সভাপতি ও অধ্যাপক আতাউর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি অনুমোদন না হওয়ায় এবং সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের ব্যর্থতার কারণে শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকান্ড ভেঙ্গে পড়ে। তবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কয়েকটি ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিয়ে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে। এতে বেশির ভাগ ইউনিয়ন কমিটি উপজেলায় ২ নেতাকে বয়কট করে।

শিবগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিকুল ইসলাম টুটুল খান বলেন, শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি না থাকায়, শৃঙ্খলা নেই। অতীতে যারা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিলেন তাদেরই ব্যর্থতা বেশী। দলকে বিভিন্নভাবে বিভক্তি করেছেন বর্তমান এমপি ডা. সামিল উদ্দীন আহমেদ শিমুল। এ ব্যপারে শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আতাউর রহমান বলেন, উপজেলা কমিটিকে জেলা কমিটি অনুমোদন না দেওয়ায় গত ৫ বছর সঠিক ভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানো যায়নি।

রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ২৩ তারিখের কাউন্সিল সুষ্ঠভাবে করার জন্য থানা ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো। তারা প্রতিটি ওয়ার্ড কমিটি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী কাউন্সিলর হবেন, এ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ ১০ জনকে কাউন্সিলর করার জন্য বলা হয়েছে, সেখানে প্রবীণ নেতারা স্থান পাবেন। বিষয়টি দেখবেন স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, থানা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণ।

আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি রাণীহাটি ইউনিয়নে সম্মেলনের স্থান না করে শিবগঞ্জ স্টেডিয়াম অথবা ডা. শিমুল এমপির বাড়ির সামনের ফাঁকাস্থানে সম্মেলনের স্থান নির্ধারণের জন্য জোর আহবান জানিয়েছেন আ.লীগের মাঠ পর্যায়ের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে