করোনার প্রভাবে বিপাকে মোহনপুরের কৃষকরা

প্রকাশিত: এপ্রিল ৩, ২০২০; সময়: ৭:২৪ অপরাহ্ণ |
করোনার প্রভাবে বিপাকে মোহনপুরের কৃষকরা

শাহিন সাগর, মোহনপুর : রাজশাহী জেলার কৃষি সম্ভাবনাময় উপজেলা মোহনপুর। ৩৬ হাজার কৃষিজীবি পরিবারের সদস্যরা ধান,পানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষাবাদ করে থাকেন এ উপজেলায়। এখানে উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্য রাজশাহীর চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হয়।

চলতি বোরো মৌসুমে ৬ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে ধান রোপন করেছেন। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪০ হাজার ৭৭০ টন ধান। তবে বৈশ্বিক মহামারী প্রাণঘাতি নোভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ প্রতিরোধে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে স্থানীয় হাট-বাজার। দোকান বন্ধ থাকায় সার, কীটনাশক সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে ।

ফলে মোহনপুরে বোরো ক্ষেতে সার-কীটনাশক দিতে পারছে না কৃষকরা। আবার মুদিখানা ও সবজি বাজার বন্ধ থাকায় কৃষকরা উৎপাদিত শাক-সবজিও বিক্রি করতে পারছেন না ফলে গুনতে হচ্ছে লোকসান। নির্ধারিত কয়েক ঘণ্টার জন্য হলেও কৃষি উপকরণ ও মুদিখানার দোকান খুলে দেয়ার দাবি জানয়েছেন উপজেলাবাসী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে দেশে চলমান করোনা পরিস্থতিতে বাংলাদেশ তৃতীয় ধাপে অবস্থান করায় তা প্রতিরোধে ও সংক্রমন ও মোকাবিলায় স্থানীয় হাটবাজার বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ। তবে ওষুধ, কৃষি উপকরণ (যেমন- সার, কীটনাশক), মুদিখানা ও সবজি দোকান খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত ২৮ মার্চ শনিবার থেকে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ করোনা প্রতিরোধের জন্য জনগনকে বাড়ীতে রাখতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অন্যান্য সকল দোকানপাট। বন্ধ আছে সার, কীটনাশক ও মুদিখানার দোকান ও।

চলতি বোরো মৌসুমে ধানক্ষেতে সার ও কীটনাশক প্রয়োগের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কৃষি উপকরণ সরবরাহ না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। ধুরইল গ্রামের কৃষক রুস্তম আলী বলেন, আমি ৫ বিঘা মাটিতে সবেমাত্র বোরো ধান রোপণ করেছি। এখন সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা খুবই প্রয়োজন। কিন্তু হঠাৎ দোকান বন্ধ থাকায় সময় মত সার ও কীটনাশক জমিতে প্রয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না। এভাবে আর কিছুদিন চলতে থাকে তাহলে বোরো ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যহত হবে। খাদ্য সংকটে পড়বে উপজেলাবাসী।

উপজেলার তালেবপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, ‘রোপণের পর এখন জমিতে বোরো ধানের পাতা সবুজ হয়ে উঠছে। এখন সার ও কীটনাশক দেওয়া খুবই জরুরি। কিন্তু দোকান-পাট বন্ধ থাকায় সার কিনতে পারছি না। গত বৃহস্পতিবার বাজারে গিয়ে সব দোকান বন্ধ পেয়েছি। দোকানিরা বলছে- পুলিশ প্রশাসন দোকান বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে সার না কিনেই ফিরে এসেছি অপরদিকে, কাঁচাবাজার ও মুদিখানা বন্ধ থাকায় সংকটে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

উপজেলার প্রধান অর্থকরী ফসল পান ও উৎপাদিত শাক-সবজি বিক্রি করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। তাদের উৎপাদিত পান, শাক সবজি বাজারে বিক্রির ব্যবস্থা না থাকায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে দিনদিন কমে আসছে এলাকার জনগনের আয়ের উৎস। যার প্রভাব পড়তে পারে দেশের অর্থনীতিতে। সে জন্য উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে সার, কীটনাশক, মুদিখানাসহ শাক-সবজি ও কাঁচা পণ্য বিক্রয়ের ব্যবস্থা করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগী কৃষিজীবি পরিবারের সদস্যরা।

এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মেহেবুব হাসান রাসেল বলেন,করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্যই হাট-বাজার লকডাউন করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সব কিছু পূর্বের ন্যায় চলবে।

তবে সার, কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণ দোকান বন্ধের ব্যাপারে মোহনপুর থানার ওসি মোস্তাক আহম্মেদ বলছেন অন্য কথা। তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জনগনকে ঘরমুখী করতে বাজারে বাজারে গিয়ে প্রয়োজনীয় দোকানপাট ছাড়া অন্যসব দোকানগুলো বন্ধ করার সময় বিভিন্ন বাজারে কিছু সার, কীটনাশক ডিলার দোকানের মধ্য আসন পেতে লোকজন নিয়ে খোশগল্প করায় ঐ সমস্ত দোকানগুলি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

তবে কৃষি অফিসারের অনুরোধে কমপক্ষে ১ মিটার সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত ও লোক সমাগম না করে সার,কীটনাশক বিক্রি করতে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঔষধ, মুদি, সার, কীটনাশক দোকানে খোলা রাখা যাবে। মালামাল নিতে আসা গ্রাহকদের কমপক্ষে ১ মিটার সামাজিক দুরত্ব দোকানদারকেই নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় ঐ সমস্ত দোকানপাটগুলি বন্ধ করে দেওয়া হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রহিমা খাতুন বলেন,গত ২৫ মার্চ ২০২০ সকল অনুমোদিত সার,কীটনাশক ডিলারদের মাস্ক,হ্যান্ড গ্লাভবস ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে সার, কীটনাশক বিক্রয় করা যাবে বলে নোটিশ জারী করেছেন উপজেলা কৃষি অফিস। তবে দোকানে বসে লোকজন নিয়ে গল্প করলে ডিলারদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান কৃষি কর্মকর্তা।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে